নেই খাদ‍্যসামগ্ৰী , কচু পাতা সজনে শাক সিদ্ধ খাচ্ছেন মালদার ইংরেজবাজারের চন্ডীপুর এলাকার কিছু পরিবার

8th April 2020 মালদা
নেই খাদ‍্যসামগ্ৰী , কচু পাতা সজনে শাক সিদ্ধ খাচ্ছেন মালদার ইংরেজবাজারের চন্ডীপুর এলাকার কিছু পরিবার


দেবাশীষ পাল ( মালদা ) :  লকডাউনের ১৫ দিন। আর বাড়িতে চাল, ডাল না থাকায় এখন খিদে মেটাতে ভরসা কচুর শাক, আর সজনে পাতা। পাঁচজনের পরিবারে অর্ধাহারে থাকা দিনমজুর রজক দম্পতির দুর্দশার কথা জানেন এলাকাবাসী। কিন্তু অধিকাংশ পরিবারের এখন নুন আনতে পান্তা ফুরানোর অবস্থা। তাই এই অবস্থায় শুধু রজক দম্পতি নয়,  অনেকেই পেট ভরাতে কচুর শাক আর সজনে পাতাকে তাদের খাদ্য তালিকায় যুক্ত করেছেন। ঘটনাটি ইংরেজবাজার ব্লকের কাজিগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েতের চন্ডিপুর এলাকায়। গ্রামবাসীদের অনেকেই বলছেন, স্থানীয় পঞ্চায়েত থেকে একবারের জন্য চাল-ডাল,আলু দেওয়া হয়েছিল ঠিকই। কিন্তু সেই সামান্য খাবারে কতদিন চলবে। অধিকাংশ পরিবার ইটভাটায় শ্রমিকের কাজের সঙ্গে যুক্ত। কেউ আবার ভিন রাজ্যে দিনমজুরি করেন । কিন্তু এখন করোনা মোকাবিলায় লকডাউনের জেরে দুর্বিষহ অবস্থা হয়ে পড়েছে চন্ডিপুর গ্রামের বেশ কিছু দিনমজুরের পরিবারগুলির। যাদের মধ্যে রয়েছেন দীপক রজক এবং তার স্ত্রী ঝর্না রজকের পরিবার। পরিবারে তাদের তিন ছেলে মেয়ে পাঁচ জনের সংসারে দুবেলা খাবার জোগাড় করতে এখন হিমশিম অবস্থা ওই পরিবারের। বুধবার চন্ডিপুর গ্রামের রজক পরিবারের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় এক চিলতে চাটাইয়ের বেড়া টালির বাড়ি। বাগান থেকে কুড়িয়ে আনা শুকনো খড়ি  এনে চলছে কচু পাতা সিদ্ধ এবং সজনের শাক তৈরি। যা নাকি লবণ দিয়ে চেটেপুটে খাচ্ছেন বাড়ির  ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা । তাদের সান্ত্বনা দিচ্ছেন বাবা দীপক রাজক এবং মা ঝর্ণাদেবী।

পেশায় দিনমজুর দীপক রজকের বক্তব্য, বেশ কিছুদিন আগেই লকডাউন এর শুরুতেই কয়েক কিলো চাল ,ডাল , আলু পেয়েছিলাম । কিন্তু সব শেষ হয়ে গেছে। নতুন করে আর কোথা থেকে চাল, ডাল, আলু দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয় নি। ঘরে টাকা করিও নেই । সংসার চলবে কি করে। তাই সকাল সকাল বাড়ি থেকে বেরিয়ে স্বামী-স্ত্রী দুজন মিলে জঙ্গলে গিয়ে কচু পাতা এবং সজনে পাতা তুলে নিয়ে আসছি। সেগুলি সিদ্ধ করে লবণ দিয়ে খাবার ব্যবস্থা করছি। কিন্তু এই খাবার তো আর বাড়ির ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা খেতে চাইছে না। পেট ভরাতে এখন যে খাদ্য সামগ্রী প্রয়োজন তা পাব কোথায় । পঞ্চায়েত আমাদের জন্য কিছু করুক, এই দাবি করা হচ্ছে ।কিন্তু এখনো পর্যন্ত অর্ধাহারে দিন কাটছে আমাদের । একবেলা কোনরকমে খাবার জুটছে ,তো আর এক বেলা না খেয়ে থাকতে হচ্ছে।

দীপক বাবুর স্ত্রী ঝর্না রজক বলেন , দুদিন হল কচুর আর সজনে পাতা দিয়ে শাক তৈরি করে খাচ্ছি । চাল নেই, ডাল নেই।  পেট চালাতে হবে তো। ক্ষিদের জ্বালায় বাড়ি ছেলেমেয়েরাও কান্নাকাটি করছে। ওদের দিকে তাকিয়ে কোনরকমে দুপুর ও রাতের খাদ্যের তালিকায় এই শাকপাতা গুলো জোগাড় করতে পেরেছি। এরকম ভাবে চলতে থাকলে বেশিদিন টিকে থাকতে পারবো না । ঘর থেকে বের হতেই হবে দিনমজুরির জন্য । তাই প্রশাসনের কাছে দরবার করেছি চাল ডাল দিয়ে আমাদের সাহায্য করা হোক । 

স্থানীয় পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ অবশ্য এব্যাপারে কিছু জানা নেই বলে জানিয়েছে । তবে বিষয়টি যদি ঘটে থাকে অবশ্যই খোঁজ নিয়ে ওই সব পরিবারকে অত্যাবশ্যকীয় খাদ্য সামগ্রী দিয়ে সহযোগিতা করা হবে বলেও জানিয়েছে।





Others News